ময়মনসিংহে প্রেমের বলি হলেন ওমর ফারুক সৌরভ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। নদীতে পাওয়া গেল তার খণ্ডিত লাশ।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভর্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ চাচাতো বোনকে ভালোবেসে দুর্বৃত্তদের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।
রোববার (২ জুন) ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে পাওয়া গেলো লাগেজে ভর্তি তার খণ্ডিত লাশ। আলাদা স্থানে পলিথিনে মোড়ানো ছিল খণ্ডিত মাথা।
সকাল ১০টার দিকে পুলিশ সেই খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে
এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থলে ভিড় করেন হাজারো মানুষ।নিহত সৌরভ ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামের ইউসুফ আলী আকন্দের ছেলে।
পুলিশ জানায়, রোবরার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সদর উপজেলার মনতলা সেতুর নিচে সুতিয়া নদীতে একটি কালো রঙের ট্রলি লাগেজ দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে নদীর পানিতে কচুরিপানার মধ্য থেকে লাগেজটি ডাঙ্গায় তুলে আনে। লাগেজ খুলতেই দেখা যায় এক ব্যক্তির দুই পা ও মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন চার খণ্ডিত লাশ। সাথে পাওয়া যায় দু’টি বালিশ, কাঁথা ও একটি পর্দা।
ময়মনসিংহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুল ইসলাম ফকির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, খণ্ডিত লাশের পরিচয় ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ, ডিবি, পিবিআই ও সিআইডি যৌথভাবে তদন্ত করেছে। লাশের আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই ব্যক্তিকে অন্য কোনো জায়গায় হত্যা করে লাশটি সেতুর উপর থেকে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে।
শনিবার রাতের কোনো এক সময় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলেও ধারণা করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তার। তিনি বলেন, হত্যার পর লাগেজে মাথা ছাড়া লাশ ভরে ব্রিজের উপর থেকে পানিতে এবং পলিথিনে মোড়ানো মাথা পাটক্ষেতের কাছে ফেলে যায় ঘাতকরা। লাগেজে শরীরের খণ্ডিত অংশের সাথে কাঁথা-বালিশও পাওয়া গেছে। লাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মেশিন দিয়ে গলা ও পা কাটা হয়েছে।
পরিচয় যাতে শনাক্ত না করা যায়, সেজন্য আলামতও নষ্ট করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফয়জুর রহমান তুহিন জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ব্রিজের নিচে একটি মাথা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তাকে জানালে তিনিই প্রথম পুলিশকে খবর দেন।
জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার ওসি ফারুক হোসেন জানান, রোববার সকালে স্থানীয়রা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে লাশ পড়ে থাকতে দেখে কোতোয়ালী থানায় খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি লাগেজের ভেতর থেকে মাথা ছাড়া শরীরের চার খণ্ড লাশ উদ্ধার করে। অদূরেই পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাথাটি পাওয়া যায়।
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, খণ্ডিত লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাাতল মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের বয়স আনুমানিক ৩০ বছর হবে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা জানান, খুন হওয়া ওমর ফারুক সৌরভ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটি’র তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামে। তিনি ডাক বিভাগের কর্মচারী ইউসুফ আলী আকন্দের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রেমঘটিত কারণ রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, সৌরভ তার চাচা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার মেয়েকে ভালোবাসতেন। কিন্তু মেয়ের পরিবার প্রেমের বিষয়টি জানতে পেরে মেয়েকে কানাডায় পাঠিয়ে দেয়।
হত্যাকাণ্ডের খবর জানাজানি হলে সৌরভের বোন ও মামা এসে লাশ শনাক্ত করেন বলেও জানান পুলিশ সুপার।
এদিকে, মাইজবাগ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: বোরহান উদ্দিন জানান, সৌরভ পরিবারের সাথে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন।