ব্যর্থ ‘র’-হাসিনার ১০ আগস্টের ক্যু চেষ্টা, পরবর্তী তারিখ ১৫ আগস্ট।সতর্কতা জরুরী।
একমাত্র খুঁটি শেখ হাসিনাকে হারিয়ে হতাশ ও বিধ্বস্ত ভারত। যে শেখ হাসিনাকে শক্তিশালী বলে জানত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, তিনি মাত্র ২২ দিনের বিক্ষোভে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে চলে এসেছেন দিল্লি। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ও হাসিনার পতনে ঢাকায় হেরে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটিতে এভাবে মার খাওয়া মানতে পারছে না ‘র’।
জানা গেছে, ভারতের সংসদে সর্বদলীয় বৈঠকে ঢাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোকে গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও ক্ষমতাসীন সরকারের উদাসীনতা বলে বিরোধী দলের এক শীর্ষ নেতা মন্তব্য করেন। অন্যদিকে, এক বিজেপি নেতা হিন্দুদের বাঁচাতে ১৯৮৮ সালের ‘মালদ্বীপ স্টাইল’ অথবা ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কায় যেভাবে ‘ইন্ডিয়ান পিস কিপিং ফোর্স’ হস্তক্ষেপ করেছিল, তেমন সম্ভাবনা যাচাই করে দেখতে বলেন।
সর্বদলীয় ওই বৈঠকের পর ভারতীয় গোয়েন্দারা নড়েচড়ে ওঠে। তারা তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে শুরু করে। আর এ নতুন অপারেশনের একটি নামও দেওয়া হয়েছে। তবে সূত্র দ্য মিরর এশিয়াকে নাম বলতে রাজি হয়নি।
ওই অপারেশনের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে রাজনীতিতে ফেরার এবং নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, শেখ হাসিনা ছোট একটা অফিস পেয়েছেন দিল্লিতে। সেখান থেকে বাংলাদেশে অনেকের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে উজ্জীবিত করার চেষ্টায় আছেন। তার বিশ্বস্ত আমলা ও বিচারপতিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। ১০ আগস্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এক ভয়াবহ পরিকল্পনাও সাজানো হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দেওয়া।
জানা গেছে, ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী সজীব ওয়াজেদ শেখ হাসিনাকে এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন। তার এ খবর ভারতীয় ও বাংলাদেশি মিডিয়ায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ছাপানো হয়। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চ বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। যে বৈঠকের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করার কথা ছিল। একই সঙ্গে পুলিশের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্বে বেশ কিছু গুলাগুলি হওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। দেশের বেশ কিছু জায়গায় সেনাবাহিনী ও নাগরিক সমাজের ওপর হামলার কথাও বলা হয়। অন্যদিকে শাহবাগ ও চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড়সহ দেশের অন্তত ২৭ জায়গায় হিন্দু মহাসমাবেশ ডাকা হয়। হাসিনার নির্দেশে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও মিশে যায়।
আরো জানা গেছে, পাশাপাশি দ্বিতীয় ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত ছিল আওয়ামী লীগের চার হাজার সশস্ত্র কর্মী। যারা প্রয়োজনে হিন্দু, পুলিশ এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা করবে। একই সময়ে সচিবালয়ে আমলাদের একটা অংশকে ক্যু’র সমর্থনে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।
পুরো ঘটনা ঢাকা থেকে লাইভ করতে দুই দলে অন্তত ১৮ জন সাংবাদিক দিল্লি থেকে ঢাকা পৌঁছেছেন বলেও জানা যায়। শুক্রবার শেষ কর্ম দিবসে যাদের ভিসা নিশ্চিত করে দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস সেক্রেটারি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসা অফিসার (সাবেক এনএসআই কর্মকর্তা) ।
আরো জানা গেছে, আরেকটি নাটকের মঞ্চ তৈরি করা হয় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের উত্তর গোতামারী সীমান্তে। সেখানে কিছু হিন্দুকে নিয়ে যাওয়া হয়। আসল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের পাশ থেকে ছবি তুলে বাংলাদেশ সীমান্তে হিন্দু শরণার্থীর ঢল নেমেছে বলে ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকরা জেনে যাওয়ায় ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
তবে সূত্র বলছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ওবায়দুল হাসানকে দিয়ে ‘বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা’ করা যায়নি। ফলে লালমনিরহাট সীমান্তের নাটকের পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ভারতের মিডিয়ায় ভীষণ রকম বাংলাদেশ বিরোধী, আন্দোলন বিরোধী সংবাদ করানো হচ্ছে। শুধু দিল্লিভিত্তিক নয়, গুজরাট ও কলকাতা থেকেও এসব সংবাদ করানো হচ্ছে। ২০২২ সালের সাম্প্রদায়িক হামলাকে সম্প্রতি ঘটেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। মাশরাফির ঘর পোড়ানোকে লিটন দাসের ঘর, ধানমন্ডি ৩২ এর আগুনকে হিন্দু বাড়িতে আগুন বলে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এত বড় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি বলেও দাবি করা হয়। দাবি তোলা হচ্ছে, পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক এ বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। তারা খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আনতে চায়। খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক হাসপাতালের ভিডিও বক্তব্যের ছবি দেখিয়ে তাকে একজন হিন্দু বিদ্বেষী পাকিস্তানপন্থি নেতা হিসেবে হাজির করা হচ্ছে।
এদিকে, দ্য মিরর এশিয়ার কাছে সূত্রের মারফত খবর আসে, বেশিরভাগ সংবাদের ড্রাফট করা হচ্ছে ঢাকা থেকে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উচ্চপর্যায়ে বসে থাকা কিছু সাংবাদিক এসব রিপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশের দিল্লিস্থ হাই কমিশনে এক রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পাঠাচ্ছে। তিনি দিল্লিতে বিভিন্ন সাংবাদিককে এসব ড্রাফট নিউজ ও ভিডিও সরবরাহ করছেন। সূত্র দাবি করছে, বাংলাদেশের এ কর্মকর্তা গত সপ্তাহে দিল্লি প্রেসক্লাবে অন্তত দুইবার বৈঠক করেন। তার সে বৈঠকের পর মূলত ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের আন্দোলনবিরোধী নিউজের বন্যা বয়ে যায়।
দ্য মিরর এশিয়া জানতে পেরেছে, ১০ আগস্টের পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় আরেকটি পরিকল্পনা রয়েছে ১৫ আগস্ট। ওইদিন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সোহেল তাজের মতো কিছু বি টিম ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে শোক পালন করতে যাবেন। অন্যদিকে আয়োজন রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এই দিবসকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি শোডাউনের পরিকল্পনা করছে। হাসিনাকে এ মুহূর্তে বহু আমলা ঢাকার পরিস্থিতি জানাচ্ছেন। ইউনূস সরকার যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইস্যু ধামাচাপা দিতে না পারে সে ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। ফলে এখন চোখ ১৫ আগস্টের দিকে। কিন্তু দ্য মিরর এশিয়া নিশ্চিত হয়েছে, হাসিনা তার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় দেশকে অস্থিতিশীল রেখে সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। অথবা ভারতের হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। জয়ের হুঁশিয়ারি ‘ইউনূস কীভাবে সরকার চালায় দেখে নেব’ লাইনটি শেখ হাসিনা যার সঙ্গে কথা বলছেন, তাকেই শোনাচ্ছেন।